চলো এবার বদলাই


ঈদ বোনাস আর বেতন পেয়েই   গেলাম মোবাইল ফোন এর দোকানে
দোকানদার কে বললাম ,ভাইয়া ভালো দেখে কিছু মোবাইল দেখান তো । দোকানদার নামিদামি ব্র্যান্ডের নতুন মডেল এর কিছু মোবাইল বের করলেন আর এক এক করে বলতে লাগলেন , এইটা খুব ভালো মোবাইল সার্ভিস ভালো দিবে 




আমি বললাম শাশুড়ি মাকে দিবো এই কালার টা ঠিক ভালো হবে কি না আর অমনি লোকটি মুচকি হেসে বলল সরি ম্যাম ।আগে বলবেন তো!! বলেই মোবাইল গুলো সরিয়ে নিয়ে কিছু বাটন ফোন বের করলেন ।ম্যাম আপনি এটা নেন লাউড সাউন্ড , কালার  ও সাদা  আর দামেও কম। বয়স্কদের জন্য একদম পারফেক্ট । আমি একটু থামিয়ে দিয়ে বললাম ,না ভাইয়া  আপনি ভুল করছেন আমার ওই দামী মোবাইল ই চাই

লোকটি বিভ্রান্তি র হাসি হেসে বলল আসলে ম্যাম সবাই তো বয়স্কদের জন্য এসব ই নেয় ।তাই
ওকে ঠিক আছে আপনি যেহেতু চাইছেন আমি আপনার পছন্দ মত স্মার্টফোন ই দিচ্ছি 
এই বলে সে নামিদামি ব্র্যান্ডের নিউ মডেলের স্মার্টফোন বের করলো 

আমি একটু দেখেশুনে প্রাইস কতো বলে পেইড করে মোবাইল বক্স এর ব্যাগটা নিয়ে চলে এলাম ।

আজ আমার খুব খুশি লাগছে । অনেক দিন ধরে ই চাইছিলাম মাকে একটা স্মার্টফোন গিফট করবো হয়েই উঠছিলো না।

বাড়িতে এসে মার হাতে ব্যগটি দিয়ে বললাম   মা এইটা আপনার জন্য। ততক্ষণে বাড়ির সবাই চলে এসেছে।
উৎসুক সবাই দেখার অপেক্ষায় কি আছে ব্র্যাগের ভেতর ।
আমি মাকে বললাম মা আপনি নিজ হাতেই খুলেন ।
মা কিছুটা খুশি কিছুটা বিব্রত কিছুটা লজ্জিত বোধ করছিলেন। আমি মার কাঁধে হাতটা  রেখে আবারো বললাম মা খুলেন না  ব্যাগটা

মা ব্র্যাগের ভেতর থেকে বক্সটা বের করতেই বাড়ির সবাই অবাক হয়ে গেল। স্মার্টফোন!!!!!
মা বললো এইটা কি করেছো তুমি পাগলামি আর কি!!
আমি বললাম না মা মোটেও নয় !!! 
আমরা সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করি কিন্তু আপনার বাটন ফোনটা নষ্ট হবার পর থেকে আপনি  আপনার প্রয়োজনে কারো সাথে কথা বলতে হলে এরতার  কাছে গিয়ে বলেন একটু কল দিয়ে দিতে ।
আপনার নিজের ওতো একটা ফোন দরকার ।
তাই বলে এতো দামী ফোন!!!?
আমি মাকে একটু জড়িয়ে ধরে বললাম .. আপনার সম্মানের কাছে এটা কিছুই না ।

মা এতোটাই খুশি হয়েছিলেন যে চোখে  পানি ছলছল  করছিলো আঁচলে ঢাকা দু'হাতে মুখ লুকিয়ে চোখ মুছলেন।

প্রতিবেশী এক চাচি আমাকে বলেই বসলেন ... কিনে তো দিলে স্মার্টফোন ইউজ করতে পারবে তো!!!
শিখিয়ে দিলেই বেশ পারবে ।
বাড়ির কেউ কেউ আবার বলতে লাগলো ... চাকুরী করে বলে নিজেকে জাহির করে সবার সামনে বড়ো হবার চেষ্টা!!!!

আসলে ভাবুন তো !! এই মা সন্তানের যোগ্য করে গড়ে তুলার জন্য কি না করেন!! নিজে না খেয়ে না পড়ে সব সুখ আত্মবিসর্জন দেন সন্তানদের জন্য।
আর আমরা কি করি !!!??? প্রতিষ্ঠিত হবার পর নিজেকে নিয়ে এতোটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি যে এক কোণে পড়ে থাকা বাবা মা'র কথা বেমালুম ভুলে যাই।
আমার হাজব্যান্ড এর মুখেই শুনেছিলাম ... বাবা ছোট মা'কে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবার পর মা কি অমানবিক কষ্ট করে তার দশটি সন্তানকে মানুষ করেছেন শিক্ষিত করেছেন ।দশের ভেতর আট জন'ই সরকারি চাকরি করছে এখন।

বিয়ের পর আমি যখন অসুস্থ হতাম মায়ের যে কি সেবা !! ভালোকিছু রান্না হলে সবাইকে সমান ভাবে ভাগকরে দেওয়া ।
আমি কাজে ব্যাস্ত থাকলে নিজের ভাগের খাবার টাও এনে জোর করেই মুখে উঠিয়ে খাইয়ে দিতেন । আমার ঠান্ডা লাগলে হতে,পায়ে,বুকে রসুন-তেল মালিশ করে দেওয়া । আমি বললে ,একি করছেন পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন মা ..... চুপ করে শুয়ে থাকো তো ,ঠান্ডা লাগলে হাতে পায়ে তেল মালিশ করলে ভালো হয়।

শুধু আমি নই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি তিনি এক'ই রকম ।
হোক সে ছেলে,মেয়ে,বউ অথবা নাতি - নাতনি ।যেনো অঢেল মায়ার আঁধার।

এমন মায়াময় শাশুড়ি মা পাওয়া ও ভাগ্যোর ব্যাপার।।।

মা রোজ ভোরে নামাজ সেরে কোরআন তিলাওয়াত করেন , হাদিসের বই পড়তে খুবই ভালোবাসেন , জুম্মার দিন ঘরে নিরবে চুপ করে বসে মসজিদ থেকে ভেসে আসা খুতবা শুনেন, ধর্মীয় গান,গজল তার খুব পছন্দ।
মোবাইল টা অন করে মা'র একটা গুগোল আইডি খুলে ইউটিউব এ লগিন করে মাকে শিখিয়ে দিলাম কিভাবে প্রয়োজনীয় কিছু খুঁজে বের করতে হয় আর ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন ধর্মীয় পেইজ এ এড করে দিলাম আর ব্রাউজ করাও মা'কে শিখিয়ে দিলাম । গুগুল আইডিতে সব ফোন নম্বরগুলো সেভ করে বললাম ... মা এখন থেকে আর নম্বর গুলো হারাবে না মোবাইল নষ্ট হয়ে গেলেও গুগুলে লগ ইন করলেই আবার পেয়ে যাবেন সব'ই।


ফৌজিয়া আফরোজ

 

Comments

Popular posts from this blog

ইচ্ছে নেই