ছোট্টবেলার ভিমরি







সেই ছোট্টবেলার কথা ।তখন আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি যাবার পথে দেখলাম রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে। পিচ ঢালাই করা হচ্ছে রাস্তায়। কেমন যেন একটা গন্ধ বেশ ভালই লাগছিল। গন্ধটা আমার কাছে বেশ আকর্ষনীয় লাগছিল বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলাম। স্কুল ছুটির পর আমরা চাচাতো ভাই বোন সবাই একসাথে বাড়ি ফিরি । রোজকার মতো সেদিনও যাচ্ছিলাম সাথে আরও ৩-৪ জন। আমার এক চাচাতো ভাই ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। ও লক্ষ্য করলো পিচ আর কেরোসিনের গন্ধ বুক ভরে নিঃশ্বাসের সাথে নিচ্ছিলাম আমি।ও একটু মৃদু হেসে বলল শোন।।।। জানিস এই পিচ কত উপকারী? আমি বললাম না তো ভাইয়া। ও তখন বলল এই পিচ যদি কাঠে লাগানো হয় তাহলে সেই কাঠে ঘুন পোকা ধরে না। আমি অবাক হয়ে খুব উৎফুল্ল তার সাথে বললাম ভাইয়া তাই নাকি!!! ভাইয়া বলল হ্যাঁ। তখন বললাম তাহলে এখান থেকে কিছু পিচ নিয়ে নেই বাড়িতে যে গিয়ে এগুলোকে লাগিয়ে দিব কাঠের গায়ে। যেই কথা সেই কাজ।।। হাত দিয়ে খামচে খামচে ড্রামের গা থেকে কিছুটা পিচ নিলাম। রাস্তায় কর্মরত লোক গুলো বলছিলো.. বাচ্চারা কি করছো তোমরা? তখন ভয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে ছুট্টে পালালাম। তারপর বাড়ি গিয়ে আমার নিজের বিছানার তোষক উঁচু করে খাটের বিভিন্ন জায়গায় পিচ ছড়িয়ে দিতে লাগলাম। ছোট ছোট করে প্রায় সমস্ত বিছানায় ছড়িয়ে দিলাম সেই পিচ। এরপর আবার তোষক দিয়ে ঢেকে দিলাম। কাজটা করলাম খুব সাবধানে বাবা-মা কেউ যেন জানতে না পারে। আর মনে মনে খুব খুশি হলাম যাক আমার বিছানার খাট নিরাপদ।।। কিছুতেই আর ঘুণপোকায় কাটতে পারবে না। আমি তো খুব খুশি। মাস ছয়েক পরের কথা। বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলে বাবা একদিন ভাবল আমার তোষক টা রোদে দেওয়া দরকার। আসল বিপত্তিটা ঘটল সেখানেই।। যেই না বিছানার তোষক ওঠাতে গেল.. বাবা তোষক উঠাবার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই তা ওঠাতে পারছিল না। অনেক টানাটানি করেও উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। আমি পাশে দাঁড়িয়ে সমস্তটাই দেখছিলাম। বাবা খেয়াল করলো তোষকের গা খাটের কাঠের সঙ্গে সেঁটে লেগে আছে। ভালো করে লক্ষ্য করে দেখল কালো কালো কি যেন একটা তোষকের কাপড় আটকে আছে যা খাটের সাথেও সাঁটানো। বাবা বিষ্ময় ওকিছুটা বিরক্তির স্বরে বলছে ... কি এগুলো!!!??? এবার আমার ভয় লাগতে শুরু করলো। বাবা আবার প্রশ্ন করলো কি এগুলো এখানে এলোই বা কি করে??? এবার খুব রাগী কন্ঠেই বলল।।।। এবার খুব হ্যাঁচকা আম দিয়ে তোষক ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করলো তোষকের কাপড় ছিঁড়ে উঠে এলো কিছু জায়গায় ব্লেড দিয়ে কেটে কেটে উঠানো হলো । এবার আমারও খুব বেশি ভয় লাগতে শুরু করলো ।।। ভয়ে একদম জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছিলাম।।। মনে মনে ভাবছিলাম বাবা কি আমাকে বকা দেবে নাকি মারবে??! বুঝতে পারছিলাম এবার আমাকে সব বলতেই হবে বেশি দেরি হয়ে গেলে মার খেতে হবে নিশ্চিত।।। ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে গিয়ে বললাম ।। "এগুলো আমি লাগিয়েছি।।" বাবা বেশ রাগী হয়েই বললো কি এইগুলো?? আমি ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম..."পিচ" বাবার রাগী চেহারা দেখে আমি খুবই ভয় পাচ্ছিলাম তা লক্ষ্য করলো বাবা। বাবা এবার একটু নরম গলায় বলল.. এগুলো এখানে কি করে এলো মা? আমি তখন বললাম .. নিপুণ ভাইয়া বলেছিলো, কাঠের গায়ে পিচ লাগিয়ে দিলে তা আর ঘুণপোকায় খায়না তাই আমি এগুলো লাগিয়েছিলাম।।কিছুটা কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম।। তারপর বেশ খানিকক্ষণ বাবা একদম স্থির দাঁড়িয়ে রইলেন আমাকে একটা বকাও দিলেন না ।আমি কিছুটা অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালাম । লক্ষ্য করলাম বাবার চোখ দিয়ে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে ।।। আসলে আমার মুখে নিপুন ভাইয়ের নামটা শোনা মাত্রই বাবার এই অবস্থা।। ।।সুবর্ণ ছোঁয়া।।
 

চলবে।।।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

ইচ্ছে নেই