অদৃশ্য ক্ষত

সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই একসাথে চা নাস্তা
করতে বসেছে নীলিমা। হঠাৎ ই একটি অপরিচিত নং থেকে কল আসে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটি ছেলে কন্ঠ বলে...আপা কেমন আছেন? আমি নিলয়। নীলিমা কিছুটা ইতস্তত বোধ করে বললো তুমি কেমন আছো?  বলতে  গিয়ে কেমন জানি হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল খুব ভয় হচ্ছিল ওর। ওর বাবা যদি শুনে ফেলে.. কার সাথে কথা বলছো ও। আর কি বা বলছে। যাই হোক আগে জানতে হবে আজ এতদিন পর হঠাৎ নিলয় কেন ফোন দিয়েছে। কি বলতে চায় ও। নীলিমা বারান্দার দরজাটা আটকে দিয়ে খুব চাপা গলায় বলে কেমন আছো? ওপাশ থেকে নিলয় বলে ভালো। আপা আমি নিরব ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলাম ।আম্মা বলছিল তোমার বাসায় গিয়ে কিছুদিন থাকবে সে তার নাতিদেরকে দেখতে চায়। ভাইয়া কে আমি বললাম আম্মার কথা ভাইয়া শুনে বলল আগে নীলিমার কাছে ফোন দিয়ে শোনো। আমি যতদূর জানি আব্বা এখন ওর বাসায় আছে। 

নিলয় বলল, আপা আম্মা কি তাহলে তোমার বাসায় যাবে কিছুদিনের জন্য?
আসলে আমাদের এখানে একটা ঝামেলা হয়েছে‍। কয়েক বছর আগে আব্বা এবং আম্মা দুজনে মিলে ব্যাংক থেকে কিছু টাকা লোন নিয়েছিল । সময়মতো সে টাকা পরিশোধ না করায় ব্যাংক থেকে নোটিশ এসেছে এবং ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে আব্বাকে কাল পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জামিনে তাকে ছাড়িয়ে এনেছি। আমাকে অন্যত্র এক দুঃসম্পর্কের চাচার বাসায় রেখেছি।এই মুহূর্তে তাকে বাড়িতে রাখা বিপজ্জনক যেকোনো সময় পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে।
 আমরা চাই না এই বুড়ো বয়সে তার হাতে হাতকড়া পড়ুক। আপা শুনতে পাচ্ছ? কি বল? আম্মাকে কি তাহলে তোমার বাসায় পাঠাবো?

নীলিমা স্তব্ধ হয়ে গেলো কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। একদিকে তার গর্ভধারিনী মা আর অন্যদিকে তার বাবা সে এখন কোন দিকে যাবে।।। এইতো প্রায় এক বছর আগের কথা ডিসেম্বর 19 । ঢাকা থেকে নিরব এসেছে নীলিমার বাসায়। 

নীরব হলো নীলিমার বড় ভাই আর নিলয় ছোট ভাই। নীরব, নীলিমা, নিলয় একি গর্ভধারিনী ভাই বোন হলেও নিলয়ের বাবা অন্য একজন। নীলিমার বাবা মা আলাদা হয়ে যাবার পর  আইনিভাবে নিরব  ও নীলিমা তার বাবার কাছে থাকার অনুমতি পায়। বাবা-মা দুজনেই আবার বিয়ে করেন। আর  নিলয় এর জন্ম হয় মায়ের ঘরে আর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে দুটি মেয়ে জন্ম হয়। নিরব ও নিলিমা তার ছোট মায়ের সংসারে বড় হতে থাকে। 

 এটা অনেক আগের কথা । যাইহোক, ইতিমধ্যে নীলিমা অনেক বড় হয়েছে তাদের বিয়ে হয়েছে নিজের সংসার হয়েছে। ইতিমধ্যে ছোট-মা-ও হঠাৎ একদিন মারা যায় । নীলিমার বাবা একদম একা হয়ে পড়ে। গ্রামের বাড়িতে একজন মানুষ একেবারে একা কি করে থাকতে পারে তাও আবার সে একজন হার্টঅ্যাটাকের রোগী। নিরব ও তার স্ত্রী দুজনেই চাকরি করে। তাদের কোন সন্তান ও নেই। ছোট মা মারা যাবার পর বাবাও ডিপ্রেশনে ভুগছেন। তাই বাবাকে নিরব এর বাসায় রাখা সম্ভব নয় । অগত্যা বাবাকে নীলিমার বাসাতেই থাকতে হয়।
 
 নিরব এসেছে নীলিমার বাসায় নীলিমা রান্নাঘরে ।বাসায় ওর বাবা  আর ছোট এক বোন ও আছে। নীলিমার সাত বছর বয়সী ছোট ছেলেও বাসায়। নিরব আস্তে করে টিভি রুম থেকে উঠে রান্না ঘরে গেল নীলিমার কাছে। নিরব বলল , আম্মা কি তোকে ফোন দিয়েছিল? খবর কিছু জানিস? আম্মা নাকি ব্রেন স্ট্রোক করেছে? কথাগুলো কিছুটা চাপা গলায় বলছিল ।পাছে কেউ  যেন না শুনে ফেলে।
 
 নীলিমা বলল-হ্যাঁ নিলয় ফোন করেছিল।
 নিরব বলল আমি আজ যাব আম্মাকে দেখতে। ড্রাইভারকে ছুটিতে পাঠিয়েছি আমি নিজে ড্রাইভ করে যাবো ভাবছি।
 
 এই কথা শুনে নীলিমা বলে বসল ভাইয়া আমিও যাব তোমার সাথে।নিরব বলল কিভাবে যাবি বাসায় ওরা আছে তো ।বের হবি কিভাবে  বাসা থেকে ?কি বলবি ওদেরকে বিশেষ করে আব্বা যদি কিছু বুঝতে পারে তখন?

 নীলিমা বলল আমি ম্যানেজ করতে পারব। কিছু একটা বলে কাটিয়ে নিব। আমি রান্না টা সেরে বের হতে পারব। নিরব বললো ঠিক আছে তাহলে আমি এখন বের হই তুই আধাঘন্টা পর আসিস আমি গ্যারেজ থেকে গাড়ি টা বের করি তারপর তোকে ফোন দিব।
 খুব সাবধান আব্বা যেন কিছু বুঝতে না পারে।

চলবে।।।।

____&&

।।সুবর্ণ ছোঁয়া।।

Comments

Popular posts from this blog

ইচ্ছে নেই